দু’পর্বে আমরা কী কী জেনেছি, মনে আছে তো? দ্রুত ঘুমাতে যাওয়া ও সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠার গুরুত্ব এবং উপকারিতা, রাতে দ্রুত ঘুমানোর ও সকালে দ্রুত উঠার বেশ কিছু টোটকা নিয়ে আমরা কথা বলেছি।[1] তবে দ্রুত ঘুম থেকে উঠার অভ্যাস করার প্রথম দিকে অনেকেরই অভিযোগ থাকে—ঘুম থেকে উঠার পর জেগে থাকতে কষ্ট হয়। আবার ঘুমিয়ে পড়ি। কী করব? আজ আমরা এই সমস্যা থেকে মুক্তির কিছু টোটকা নিয়ে জানবো।
ক) ঘুম থেকে উঠে ঝিম মেরে বসে বা শুয়ে থেকো না। এই সময়টাতে কয়েকটা খারাপ বিষয় ঘটার সম্ভাবনা থাকে—
- হয় তুমি ঘুমিয়ে যাবে।
- নয়তো তোমার মনে খারাপ চিন্তা আসবে। খারাপ চিন্তা থেকে আরও খারাপ কিছু হয়ে যাবে।
- নয়তো তুমি মোবাইলটা টেনে নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় যাবে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা সময় নষ্ট, চোখের গুনাহ, হতাশা, আক্ষেপের চাষাবাদ করে সকালটা নষ্ট করবে। মাথা আউলায়া যাবে। প্রত্যেকটা সকাল মানে নতুন সম্ভাবনা, নতুন প্রত্যাশা। রাতে বিশ্রাম নেবার পর ঠান্ডা মাথায় নতুন দিনটা অনেক প্রোডাক্টিভ করতে পারতে। কিন্তু তা আর হবে না।
তাই, ঘুম থেকে জেগে উঠার সাথে সাথেই বিছানা থেকে নামো। একটু হালকা ব্যায়াম করে নিতে পারো। কয়েকটা পুশআপ বা কয়েকটা সিটআপ। বাথরুমে যাও। ফ্রেশ হয়ে নাও, ওযু করো। যদি লজ্জা না করে এবং যদি সম্ভব হয় তাহলে সবচেয়ে ভালো হলো গোসল করে নেওয়া। তোমার শরীর একেবারে তরতাজা হয়ে যাবে। মনে ভীষণ ফুর্তি আসবে।
খ) ফজরের নামায পড়ে সকাল সন্ধ্যার ২৩ টি আযকার আছে[2]। এগুলো পড়ে নাও। এগুলো তোমাকে সকল ধরনের ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করবে ইনশাআল্লাহ।
গ) প্রকৃতির সংস্পর্শে যাও। গায়ে ঠান্ডা বাতাস লাগাও। প্রকৃতি দেখো। সূর্যের আলো গায়ে মাখো। একটু ব্যায়াম করো। হাঁটাহাঁটি করো। পারলে দৌড়াও। বুক ভরে শ্বাস মুক্ত বাতাসে নাও। আহ! এই তো জীবন! এই তো সময়!
ঘ) রাতে ঘুমানোর কারণে দীর্ঘ সময় আমাদের পেটে কোনো দানাপানি পড়ে না। পেট খালি হয়ে যায়। একদম সকালেই নাস্তা করে নাও। ভরপেটে নাস্তার কথা বলছি না। দুইটা বিস্কিট, মুড়ি চানাচুর বা কয়েকটা খেজুর, এক চামচ মধু, অল্প কিছু বাদাম, এক গ্লাস পানি—এমন জাতীয় কিছু নাস্তা করে ফেলো। তোমার মাথা ঝিম ঝিম করবে না। বিছানায় আবার ফিরে গিয়ে ঘুমানোর তীব্র ইচ্ছাটা খাবারের শক্তির কাছে পরাজিত হয়ে মাথা নিচু করে বিদায় নেবে।[3]
এরপরেও যদি মাথা ঝিম ঝিম করে, ঘুম ধরে, সোজা বাইরে যাও। এক কাপ চা খেয়ে আসো। একটু হেঁটে আসো।
ঙ) বিছানা একেবারে বয়কট করো কয়েক ঘণ্টার জন্য। চেয়ার-টেবিলে বসে পড়াশোনা বা কাজ যা করার করো। বিছানায় বসে পড়া শুরু করলে ঘুমিয়ে যাবে।
চ) তোমার ডায়েরিতে লিখে রাখবে সকালে ঘুমানোর কারণে তোমার শরীরের কী কী ক্ষতি হচ্ছে, তুমি জীবন থেকে কী কী হারাচ্ছ বা ভবিষ্যতে হারাবে। ঘুমাতে ইচ্ছা করলে এটা মাঝে মাঝে খুলে দেখতে পারো।
ছ) সকালে তুমি সবচেয়ে প্রিয় কাজটা করো। এমন প্রোডাক্টিভ কাজ করো, যে কাজে তুমি আনন্দ পাও। তা করার জন্য তোমার মনে জোর খাটাতে হয় না। প্রিয় কাজের মধ্যে ডুবে গেলে ঘুম কোথায় পালিয়ে যাবে খেয়ালও থাকবে না।[4]
ফজরের পর টানা জেগে থাকলে শরীরে কিছুটা ক্লান্তি চলে আসে। দুপুরের দিকে বা বিকালের সময় থেকে মাথা ব্যথা হয় অনেকেরই। দিনের পরের অংশগুলো প্রোডাক্টিভভাবে কাটানো যায় না। এ সমস্যার সমাধান হিসেবে দুপুরের দিকে একটু ঘুমিয়ে নিতে পারো। ২০-৩০ মিনিট। রাসূলুল্লাহ ﷺ দুপুরে কিছুসময় বিশ্রাম গ্রহণ করতেন।[5]
দুপুর বেলা একটু ঘুমিয়ে নাও। নবিজির সুন্নাহ। শরীর চনমনে রাখবে। যাদের ক্লাস থাকে এটা করতে পারো না, তারা রুম থেকে বের হবার আগে একটু ঘুমিয়ে নিতে পারো। সেটা হতে পারে ১০/১১ টার সময়। এটা তোমার ইচ্ছামতো পরিবর্তন হবে।
আসলে দেখো, প্রথম প্রথম অল্প কিছুদিন অনেকেরই ফজরের পর জেগে থাকতে একটু কষ্ট হয়। যেকোনো অভ্যাস আয়ত্বে আসতে কিছুদিন সময় লাগে। একদিনে হুট করে সম্ভব হয় না অধিকাংশ মানুষের পক্ষেই। তাই, ঘুম থেকে উঠার কিছুক্ষণ পর আবার ঘুমিয়ে গেলে দুঃখ হবে, কিছুটা হতাশা আসবে, কিন্তু হাল ছেড়ে দেওয়া যাবে না। এমন মন খারাপ করা যাবে না যে—ধুর আমার দ্বারা হবেই না, আমি পারবই না। এমন চিন্তাভাবনা চলে আসে মনে। যদি মানুষের পক্ষে সকালে উঠা, সকালে জেগে থাকা অসম্ভব হতো, তাহলে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা সকালে এত বরকত রাখতেন না। পৃথিবীর সূচনা থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত কোটি কোটি মানুষ সকালে জেগে থাকে। আমাদের আল্লাহ বানিয়েছেন এই সক্ষমতা দিয়ে। কাজেই তুমি পারবে না—এটা আসলে গ্রহণযোগ্য কোনো অযুহাত নয়। তুমি পারবেই।