আব্বা

আব্বা

এক.

পুবের বিলের ধারের বিশাল কড়ই গাছটার নিচে জনা পাঁচেক যুবকের আড্ডা। পাশেই চারটি বাইক। রায়হান ও তার বন্ধুরা প্রায় প্রতিদিনই সময়-অসময় এদিক-সেদিক বাইকে ঘুরে বেড়ায়। ইন্টার পাস করে ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে প্রথম আবেদনে অনার্স ভর্তির সুযোগ মেলেনি রায়হানের। তাই এ-বছর আপাতত বিশ্রাম। সামনের বছর অনার্সের জন্য আবার ট্রাই করবে। খাওয়া-গোসলের সময় ছাড়া রায়হান তার পুরো সপ্তাহই ব্যয় করে বন্ধুদের সাথে অহেতুক আড্ডায়। আজকে তাদের আড্ডা হচ্ছে ট্যুর নিয়ে।

‘এভাবে গ্রামের চিপাচাপায় আর কত? দূরে কোথাও ঘুরতে যাওয়া দরকার।’

বিষয়টাতে খুব একটা মত দিচ্ছে না রায়হান। কারণটা অবশ্য কারও অজানা নয়। রায়হানের বাইক নেই। বন্ধুদের বাইকে চড়ে দূরে ট্যুর দেওয়া তার আত্মসম্মানে লাগছে। একেবারে সঙ্গ দোষে লোহা ভাসার মতো ব্যাপার। বন্ধুরা যা করে, ওরও তা-ই করতে হবে।

ওর বন্ধুরা সবাই মোটামুটি ধনী পরিবারের সন্তান। আর সে মধ্যবিত্তের ছেলে। শহরের এক কোণায় তার বাবার ছোট্ট একটা কাপড়ের দোকান। বাচ্চাদের কাপড়। ধনীরা তো বছরেও এইসব দোকানে পায়ের ধুলি দেয় না। বড় বড় এসি লাগানো শপিং মলের বাইরে এসব দোকানে তাদের চোখ পড়ে না বললেই চলে। মধ্যবিত্ত, নিম্ন-মধ্যবিত্তরাই এখানকার নিত্য কাস্টমার। তারাও অতি প্রয়োজন না হলে কাপড়-চোপড় কিনতে যায় না। মধ্যবিত্তের কাপড় কেনার একমাত্র সময় বছরের দুইটা ঈদ। ‘যখন মন চায় তখন কিনো’ – এগুলা ধনীদের শখ, মধ্যবিত্তের বিলাসিতা আর নিম্ন-মধ্যবিত্তের কল্পনা।

চার বোনের একমাত্র ভাই রায়হান। ভাই-বোনের মধ্যে দ্বিতীয়। বড় বোনটার কয়েক মাস আগেই বিয়ে হলো পাশের গ্রামে। কোনোমতে সংসার চালানো আনিছ মিয়া কীভাবে মেয়ের বিয়ের খরচ জোগালেন সে বিষয়ে বিন্দুমাত্র ভাবনার জায়গা নেই ঊনিশ বছর বয়সী তাগড়া যুবক রায়হানের মস্তিষ্কে। তার মস্তিষ্ক ভরা শুধু বড়লোকি বন্ধুদের সাথে পাল্লা দেওয়ার চিন্তা। সেটাও বাবার টাকায়।

‘না, আব্বারে বইলা একটা বাইক কিনতেই হইব। আমি একমাত্র পোলা। আমারে কিন্না দিব না তো কারে দিব!’

বন্ধুদের আড্ডায় বসে ভাবতে লাগল রায়হান। হঠাৎ খেয়াল করল তার ফোন বাজছে। রিসিভ করতেই তার ছোট বোনের কন্ঠস্বর, ‘ভাইয়া, তাত্তারি বাড়িত আইও। আব্বা চিকেন ভাজা আনছে।’

বন্ধুরা আড়ি পেতে ছিল। শুনেই হেসে ফেলল তারা। ‘চিকেন ফ্রাই-রে তোর বাসায় চিকেন ভাজা বলে নাকি রে?’

লজ্জায় রায়হানের মুখ-কান লাল হয়ে যায়।

দুই.

খুব রেগে বাসায় ঢোকে রায়হান। বন্ধুদের সামনে আজ অপমানিত হওয়ার রাগ। কিন্তু তার ভাবখানা এমন যেন এই মাত্র দুই বিঘা জমি নিজ কাঁধে লাঙল বেঁধে চাষ করে এলো সে। সারাদিন গায়ে হাওয়া লাগিয়ে ঘুরে বেড়ানো বেকার যুবকের অকারণে এমন রাগ যেকোনো স্বাভাবিক মানুষের হজম শক্তির বাইরে। আনিছ সাহেব কী করে যে সহ্য করেন তা বোঝা মুশকিল!

একমাত্র ছেলেকে খুবই আহ্লাদ করে বড় করেছেন তিনি। অনেক চেষ্টা করেও ছেলেকে মাদরাসায় পড়াতে পারেননি। মেয়ে সবগুলোকে যদিও মাদরাসায়ই পড়াচ্ছেন। শাসনের কারণে যদি সে জেনারেল লেখাপড়াটাও ছেড়ে দেয় তাহলে তার কী গতি হবে, এই ভয়েই ছেলেকে কিছু বলেন না তিনি।

‘অনার্সে ভর্তিটা হইতে পারলেই আর চিন্তা নাই। ভবিষ্যতে চাকরি-বাকরি পাইলেই তো আমি অবসর। তহন তো আমার পোলা-ই সব দেখব।’ – এই ভরসায়ই দিন পার করছেন তিনি।

‘বাপজান আইছস? দেখ তোর লাগি তোর পছন্দের চিকেন ভাজা আনছি।’

আনিছ মিয়ার সব ছেলেমেয়েই চিকেন ফ্রাইটা অনেক পছন্দ করে। তাই প্রায়ই তিনি শহর থেকে ফেরার পথে তাদের জন্য ফ্রাই নিয়ে আসেন।

‘আব্বা! তোমাগোরে কতবার কইলাম এইডারে ফ্রাই কয়। ফ্রাই কইতে পারো না?’

‘ওইসব ফেরাই টেরাই মুখ দিয়া আইয়ে না, বাজান।’

‘আইব ক্যামনে? মূর্খরা কি আর এসব বুঝে?’

কথাটা আনিছ মিয়ার মনে প্রচণ্ড আঘাত দিলেও ছেলের সামনে এক মলিন হাসি দিয়ে কথাটা উড়িয়ে দিলেন, ‘এর লাইগাই তো তোরে শিক্ষিত বানাইতাছি বাজান। খা, বাজান খা। রাগ করিস না।’

‘আমার টা আমারে আলাদা দিয়া দ্যাও। আমি তোমাগো লগে খামু না’, বলেই দুইটা ফ্রাই আলাদা প্লেটে নিয়ে সে রুমে চলে গেল।

ছোট তিন বোন আয়েশ করে খাচ্ছে। একজন বলে উঠল,

‘আব্বা, তুমি খাইবা না?’

‘না রে, মা। আমি তো বাজারে রোজই খাই। তোরা খা।’

‘আম্মা, তুমি ইট্টু খাও?’

শেফালি বেগম মায়াবি চোখে একবার ক্লান্ত আনিছ মিয়ার দিকে তাকালেন, তারপর বললেন, ‘ভাজাপোড়া খাইলে পেটে হাসফাস করে রে, মা। তোরা খা, আমার এইসব ভাজাপোড়ায় রুচি আইয়ে না।’

রায়হান তার রুম থেকে সব শুনছিল।

‘আদিখ্যেতা দেখলেই গা জ্বইলা উঠে। (ছোট বোনদের উদ্দেশ্য করে) জানে যে সাধলে খাইব না, তবুও প্রত্যেকবারই সাধাসাধির ঢং।’

তিন.

রাতে খাবার সময় রায়হানকে চুপচাপ দেখে আনিছ মিয়া জিজ্ঞেস করলেন, ‘বাপজান, তোর কি এহনো মন খারাপ?’

‘আব্বা, আমার বাইক লাগব। সবাই বাইক দিয়া ঘুরতে যাইব, ম্যালা দূরে। ঘুরতে যাওয়ার আগেই আমার বাইক লাগব। আমি নিজের বাইক দিয়া ঘুরবার যামু। অন্য কারও বাইকে চইড়া যাইতে পারমু না।’

অনুরোধের বদলে রায়হান যেন সোজা আদেশ দিচ্ছে বাবাকে।

‘কবে ঘুরবার যাবি, বাপ?’

‘এই মাসের ২৩ তারিখ।’

তার মানে আনিছ মিয়ার হাতে সময় মাত্র ১০ দিন। দশ দিনের ভিতরই বাইক কিনে দিতে হবে ছেলেকে। শেফালি বেগম কিঞ্চিৎ রেগে গেলেন,

‘তোর আব্বার অবস্থাডা দেখছস? বড় মাইয়ার বিয়া দিয়া কত টেহা দেনা হইল। ওইসব ঋণ মিডাইয়া তো এহনো সোজাই হইল না। আরও কয়েকজন বাকি। দশদিনে এত টাকা ক্যামনে জোগাইব? এই বয়সে বাপের ব্যবসায় কোনো সাহায্যও তো করস না। বইসা বইসা হুকুম দিতে সরম করল না?’

আনিছ মিয়া অগ্নিচক্ষু ইশারায় থামিয়ে দিলেন শেফালি বেগমকে।

‘আইচ্ছা, বাজান। আমি দেহি কী করা যায়।’

‘দেহি টেহি বুঝি না। আমার বাইক লাগবই।’

চার.

বন্ধুর সঙ্গে বাইকে করে শহরে গিয়েছিল রায়হান। বন্ধুর খালার বাসায়। ফেরার পথে বাবার দোকানে দেখা করতে গেল। দোকানে ছেলেকে দেখে তো আনিছ মিয়া বেজায় খুশি।

‘বাপজান, আইও ভিতরে আইও। বও বাপজান। কী খাইবা কও?’

‘আমি কি পোলাপাইন নাকি? এত আহ্লাদ করন লাগব না। বন্ধুর লগে এমনি ঘুরতে আইছিলাম। ভাবলাম তোমারে দেইখা যাই। বাইকের টাকা জোগাড় হইছে?’

‘হইয়া যাইব, বাজান। আর কয়ডা দিন। কয়েকজনরে কইছি।’

‘তো, আমি বাড়িত গেলাম। তুমি কহন যাইবা?’

‘বিকালে যামুরে, বাপ। তুই যা।’

রায়হান বাইকে উঠে রওনা দিলো গ্রামের দিকে। আনিছ মিয়া এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ছেলের দিকে। একটু সামনে যেতেই বাইকটা একটা অটোরিকশার সাথে ধাক্কা লাগে। বাইক কাঁত হয়ে রায়হান ও তার বন্ধু মাটিতে পরে যায়। হালকা একটু আঘাত পায় দু’জনেই।

আনিছ মিয়া এক চিৎকারে দোকান থেকে লাফিয়ে দৌড় দিলেন, ‘ও বাজান, বাজান! তুমি ব্যথা পাওনাই তো? বাজান… ‘

এর বেশি কিছু বলার সুযোগ পেলেন না। আদরের বাপজানের কাছে পৌঁছানোর সুযোগও পেলেন না আনিছ মিয়া। বেখেয়ালি হওয়ার কারণে পেছন থেকে আসা ট্রাকের শব্দ শুনতে পাননি তিনি। ট্রাকটা এক ঠেলায় একদম পিষে চলে যায় আনিছ মিয়াকে।

চোখের সামনে রায়হানের পুরো দুনিয়া থমকে যায়। তার তো কিছুই হয়নি। কিন্তু তার বাবা শেষ নিঃশ্বাসটাও যে ত্যাগ করলেন তার ভালোবাসায়, তার চিন্তায়। বড়লোকি ভাব দেখিয়ে চলা রায়হান মধ্যবিত্ত পিতাকে আজ সবার সামনে ‘আব্বা’’ পরিচয় দিতে লজ্জা পেল না। দৌড়ে বাবার নিথর দেহখানা জড়িয়ে ধরল। চিৎকার করে ডাকল, ‘আব্বা… ও আব্বা, আব্বা গো, ও আব্বা।’

আনিছ মিয়া জীবিত থাকলে এই মধুর ডাকে আজ হয়তো তার প্রাণ আনন্দে ভরে উঠত। কিন্তু রুহ যে মাত্রই ত্যাগ করেছে তার সাধের দেহখান। কষ্ট করে আর হাসপাতালেও নিতে হয়নি তাকে। আজরাইল এখানেই কার্য সেরে নিয়েছেন।

পাঁচ.

সুন্নতি লেবাসে আবৃত রায়হান এখন মাসজিদের নিয়মিত মুসল্লি। বাবাকে নিজ হাতে মাটিতে শুইয়ে ক্ষণস্থায়ী দুনিয়ার প্রতি মায়া কিছুটা ত্যাগ হয়েছে তার। ইতোমধ্যেই শুরু হয়েছে তার সঠিক পথের পথচলা। যে পথ তার বাবা তাকে অনেক আগেই চেনাতে চেয়েছিল।

ছোট তিন বোনের মাদরাসার খরচ, অসুস্থ মা, বড় বোনের বিয়ের ঋণ, সবই এখন তার দায়িত্বে। সবকিছুর দায়িত্ব মেটাতে এখন তার একমাত্র ভরসা বাবার ছোট্ট ব্যবসা। এখন বাবার এই ছোট্ট দোকানে রায়হান নিজেই বসে। দুপুরে খাবার সময় কত কিছুই না খেতে মন চায়। বিরিয়ানি, চিকেন ভাজা, মাংস-ভাত। কিন্তু সারাদিনে যে অল্প আয়-রোজগার, তাতে এসব খেলে বাসায় নিয়ে ফিরবে কী? এই ভেবে পাউরুটি আর কলার মতো স্স্তা খাবার খেয়েই দুপুরটা কাটিয়ে দেয় সে। বাবার কষ্টগুলো সে এখন কিছুটা হলেও অনুভব করতে পারছে। বাবাদের জীবন যেমন সহজ না ,তেমনি বাবার জায়গায় দাঁড়িয়ে বাবা হওয়াও এত সহজ না।

রায়হানের দোকানের মুখোমুখি জমির চাচার প্লাস্টিক জগ-বালতির দোকান। ব্যবসায়িক সূত্রে আনিছ মিয়ার সাথে বন্ধুত্ব ছিল তার। আজ স্কুলের সাপ্তাহিক ছুটি হওয়ায় জমির চাচা সাথে করে তার আট বছরের ছেলে রাফিকে নিয়ে এসেছেন দোকানে। রাফির খুব শখ বাবার দোকানে আসবে। জমির চাচার সে কী আহ্লাদ। কখনো গোলাবজামুন, কখনো দই, কত কী-ই না খাওয়াচ্ছেন ছেলেকে। খানিকক্ষণ পর চিকেন ভাজা নিয়ে আসলেন ছেলের জন্য।

রায়হান সবই তাকিয়ে দেখছে। কোনোদিন বাবার কোনো জিনিসে আগ্রহ দেখায়নি সে। স্কুল-কলেজের ফাঁকে যা সময় পেত, সব ব্যয় হতো বন্ধুদের আড্ডায়। 

রাফি চিকেন ভাজা খাচ্ছে আর বারবার জমির চাচাকে বলছে, ‘আব্বা, তুমিও একটু খাও। দেহো, এইগুলা কত্ত মজা।’

‘না, বাজান। আমি প্রতিদিনই এগুলা খাই, তুমি খাও।’

বাক্যটা রায়হানের কাছে বাল্যকাল থেকেই পরিচিত। জমির চাচা যে এসব কখনো মুখেও তোলেননি, তা তো রায়হান এই ক’দিনে ভালোই বুঝেছে। মধ্যবিত্ত বাবারা বাজার থেকে তাদের আত্মার খোরাকটা সঞ্চয় করে নিয়ে যায় শুধুমাত্র ছেলেমেয়েদের তৃপ্তির জন্য।

রাফি জোর করে এক টুকরো চিকেন ভাজা জমির সাহেবের মুখে তুলে দিল। চিকেন ভাজা চিবোতে চিবোতে রায়হানের চোখে চোখ পড়ল তার, তারপর সশব্দ হাসিতে রায়হানকে বলতে লাগল, 

‘আরে! চিকেন ভাজা তো হাছাই অনেক মজা। তোমার আব্বাও দেখতাম প্রায়ই তোমাগো লাইগা বাড়িত নিয়া যাইত এগুলা। আর বলত, বাড়িত গিয়া সবাই একলগে খামু।’

রায়হান নির্বাক। বলার মতো কিছুই নেই তার।

‘কতকিছুই আব্বা বাজার থেকে নিয়া যাইত। কোনোদিন তো আব্বা-আম্মার মুখে তুইলা দেইনাই কিছু। তুইলা দিলে হয়তো তারাও বুঝত আসলেই খাওনগুলা কত্ত মজা, আসলেই চিকেন ভাজা অনেক অনেক মজা।’

কোনোপ্রকার আগাম সংকেত ছাড়াই অশ্রুর স্রোতধারা বইতে বইতে গাল বেয়ে পরতে লাগল রায়হানের। সে খেয়ালও করল না। আকাশের দিকে তাকিয়ে, বহমান অশ্রুধারা নিয়েই রায়হান তালাশ করছে বাবাকে,

‘আব্বা! কই তুমি? কই হারাইয়া গেলা? একটাবারের লাইগা কি তোমারে আর পামু না? একটাবার তোমার মুখে একটু চিকেন ভাজা জোর কইরা তুইলা দিয়া কইতাম, “আব্বা দেহো, এইগুলা কত্ত মজা!” কই পামু তোমারে, আব্বা?’

রায়হানের কান্না পৃথিবীর সব কান্নাকে আজ হার মানাচ্ছে। পাখপাখালি সব নিস্তব্ধ। পুরুষ মানুষের কান্না বড় দুর্লভ আর বেদনাবিধুর। তার সাথে থাকলে আজ যে কেউ কাদঁতে বাধ্য।

ছয়.

রায়হান বাসায় যাওয়ার সময় সবার জন্য চিকেন ভাজা নিয়ে গেল। বোনেরা তো মহাখুশি।

আম্মুকে আলাদা প্লেটে তিনটা ফ্রাই দিয়ে আসলো রুমে।

‘ভাজাপোড়া তো আমার… .’

শেফালি বেগমকে কথা শেষ করতে দিলো না রায়হান। কারণ সে এখন বুঝে যে, আব্বা খায় নাই বলেই আম্মা এই অজুহাত দিয়েছে সব সময়।

‘পেট খারাপ হইলে আমি ওষুধ আইন্না দিমু , তুমি খাও তো।’

রায়হান রুমে গিয়ে দোকানের হিসাব-কিতাব মিলাচ্ছে। মা তার চিকেন ভাজার প্লেটটা নিয়ে তার রুমে গেল।

রায়হানের বা’পাশে বসে বলল,

‘বাপজান, তুই খাবি না?’

‘আমি বাজার থেকে খাইয়া… ‘

রায়হানের কথা থামিয়ে দিয়ে তার বাহাত শেফালি বেগম নিজের দুই হাত দিয়ে চেপে ধরলেন। চোখের পানি ঝড়ে পড়ছে তার হাতে। মাথা নিচু করে কাদঁতে কাদঁতে বললেন,

‘তোর বাপও সব সময় এই কথা কইত। সত্যিটা তো আমি জানি। তোর বাপের মুখ দেখলেই সব বুঝতাম। আর তুই কি ভাবছস আমি মা হইয়া তোর মুখ দেইখা কিছুই বুঝি না?’

রায়হান হাউমাউ করে কেঁদে উঠল। চিৎকার দিয়ে মায়ের কোলে শুয়ে পড়ল। দু’জনের কান্নায় পরিবেশ ভারী হয়ে উঠল।

‘আব্বা কত কষ্ট করছে গো, আম্মা। আমাগো লাইগা কত কষ্ট করছে। কত ভালোবাসছে আব্বা আমারে। আমি তহন ক্যান বুঝি নাইগো আম্মা, ক্যান বুঝি নাই? তুমি আল্লাহরে কও না আম্মা, আব্বা যেন আমারে মাফ কইরা দেয়, আল্লাহরে বুঝাইয়া কও না।’

ষোলোকে ছড়িয়ে দিন